রঙ ও রূপের মরিচা ফুল

প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো বিদেশি ফুল। কারণ সচরাচর খুব একটা দেখা যায় না। বিক্ষিপ্তভাবে দু-একটি বাগানে চোখে পড়ে; কিন্তু বইপত্র ঘেঁটে দেখি এ ফুল আমাদের দেশে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে। স্থানীয় নাম- মরিচা, কাকটুরী ও বন কার্পাস।

ফুলের মরিচা নামটি পাকা মরিচের রঙের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। ইংরেজি নাম Blood Flower, Mexican Butterfly Weed ইত্যাদি। দেশের নদী-তীরবর্তী অঞ্চল, পতিত স্থান এবং পাহাড়ের পাদদেশে আপনা- আপনিই জন্মে। সম্প্রতি সিলেটের জৈন্তা পাহাড় লাগোয়া পরিত্যক্ত মাঠের ধারে ফুলটি আবিষ্কার করি। 

মরিচা চিরসবুজ খাড়া কাণ্ডের বহুবর্ষজীবী ছোট গুল্মের গাছ। সাধারণত ১ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। গাছের গোড়া থেকেই প্রচুর ডালপালা গজায়। পত্র সবৃন্তক, পত্রবৃন্ত অনূর্ধ্ব দেড় সেমি লম্বা, পত্রফলক ১০ থেকে ১২ সেন্টিমিটার সুস্পষ্টভাবে বল্লমাকার, দুই দিকে ক্রমান্বয়ে সরু, পাতলা ঝিল্লিময় ও মসৃণ। পাতা বিপ্রতীপ ও কাঁচা সবুজ রঙের। বিক্ষিপ্ত পুষ্পমঞ্জরিতে ৮ থেকে ১০টি করে ফুল থাকে। মঞ্জরি দণ্ড প্রায় ৭ সেন্টিমিটার উঁচু। দলমণ্ডল উজ্জ্বল, গাঢ়-রক্তিম-লাল ও মসৃণ। পরাগধানী প্রায় আড়াই সেন্টিমিটার লম্বা। পৃথিবীর বিভিন্ন উষ্ণম-লীয় বাগানগুলোতে প্রজাপতির খাবার কিংবা অলঙ্করণের জন্য এ ফুল রোপণ করা হয়। 

মরিচা ফুল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডসহ পূর্ব এশিয়ার উষ্ণমণ্ডলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। এ গাছের মূল পেটের পীড়া, বমনকারক ও জ্বরনাশক। পাতার রস কৃমিনাশক ও রক্তক্ষরণ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। জ্যামাইকাতে এটি আমাশয়, অশ্বরোগ এবং গনোরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে সারাপৃথিবীতে এদের অনেক আবাদিত জাত বিভিন্ন উদ্যানের শোভাবর্ধনে সহায়তা করছে।

লেখক : মোকারম হোসেন, নিঃসর্গবিদ

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //